All publications of BD-48614 . Dhaka , Bangladesh

স্বাধীনতা দিবস:১৬ ডিসেম্বর না ২৬ শে মার্চ ?

মেজর তারিকুল ইসলাম মজুমদার, পিএসসি,জি (অব ?

আমি অনেক শিক্ষিতজনের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনেছি -স্বাধীনতা দিবস ১৬ ডিসেম্বর না হয়ে ২৬ সে মার্চ কেন ? এ বিষয়ে একটু খোলসা করার প্রয়াসে আজকের এই লিখা।

ইতিহাস

 এ বিষয়ে খোলসা করার প্রয়োজন আছে বৈকি। তবে একটু ইতিহাস টানতে হবে। এখন ইতিহাসের প্রধান বিতর্কের বিষয় হল , কে আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন , বঙ্গবন্ধু, না মেজর জিয়াউর রহমান। ইতিহাস বলছে পাকিস্তানী কমান্ডো বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ২৬ মার্চ ১৯৭১ , রাত ৩ :০০ তার সময়। যদিও ২৫ মার্চ রাত ১১০০ ঘটিকা থেকে তারা পুরো ঢাকা শহরে আক্রমণ শুরু করে।

 গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে গ্রেফতারের প্রাক্কালে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ছিল নিম্নরূপ:

“এটিই সম্ভবত আমার শেষ বার্তা: আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণের নিকট আমার আহবান, আপনারা যে যেখানেই থাকুন এবং আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করুন। যতদিন পাক হানাদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত না হয় এবং যতদিন আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হয় ততদিন সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।“

 ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় ৮ ইস্ট বেঙ্গল এর বিদ্রোহী নেতা মেজর জিয়াউর রহমানও বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বদৌলতে তা শুনতে পেয়েছি। এটা ছিল মুক্তি যুদ্বের জন্যে এক কথায় একটি 'Sparking Effect" মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার ভাষণে নিজেকে ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসেবে ঘোষণা করলেও, পরদিন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন।”

 জিয়াউর রহমানের সেই ঘোষণাটি ছিল :

“On behalf of our great national leader, the supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman do hereby proclaim the independence of Bangladesh”

২৬ মার্চ ১৯৭১ সালেই স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল

 সুতরাং যে কোন তর্কেই যাবেন ,বঙ্গবন্ধু কিংবা মেজর জিয়া যে ই প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করেন না কেন , একটি সত্যই প্রকাশিত হবে , তা হল ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালেই স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল এবং সে ঘোষণা থেকেই বাংলাদেশ নামক একটি নুতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। আর ২৬ মার্চ ই আমাদের স্বাধীনতার দিবস।

 এর ফলে কি লাভ হল? লাভগুলি শুনুন:

১. ২৬ মার্চ রাত ১২:০১ পর থেকেই বাংলাদেশ হয়ে গেলো স্বাধীন রাষ্ট্র আর পাকিস্তানিরা পরিণত হল দখলদার বাহিনী রূপে, ইংরেজিতে যেটাকে বলা হয় Occupation Force .

২. আর এ দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মুক্তি সংগ্রাম বা মুক্তিযুদ্ব করার অধিকার আমরা লাভ করলাম।

৩. তাজউদ্দীন আহমেদ ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় ফরিদপুর কুষ্টিয়া পথে পশ্চিম বাংলার সীমান্তে পৌঁছান। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ মার্চ মেহেরপুর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পদার্পণ করেন। তারপর ইন্দিরা গান্ধীর সহিত সাক্ষৎ করলেই প্রথমেই মিসেস গান্ধী বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে চান। পরবর্তীতে তাজউদ্দীন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের বিদ্রোহের কথা এবং জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা মিসেস গান্ধীকে বলেন। তাজউদ্দীন আহমেদের এ কথার উপর আস্বস্ত হয়েই শুরু হয় মিত্র বাহিনী কতৃক মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা।

৪. ৪ এপ্রিল সকাল ১১:০০ টায় সেনা কর্মকর্তাদের সকলে সিলেটের তেলিয়াপাড়া বাংলোতে উপস্থিত হন। ১০ টার দিকে ভারতীয় বিএসএফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ভি সি পান্ডে ও আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওমেস সায়গল বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীকে সঙ্গে নিয়ে তেলিয়াপাড়াস্থ সেনা সদরে এসে উপস্থিত হন। সকাল ১১টায় সভার কার্যক্রম শুরু হয়। ঐতিহাসিক এ সভায় কর্নেল (অবঃ) এম এ জি ওসমানী এমএনএ, লেঃ কর্নেল (অবঃ) এম এ রব এমএনএ, লেঃ কর্নেল সালাউদ্দীন মোহাম্মদ রেজা, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কে এম সফিউল্লাহ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদ্রোহী মহকুমা প্রশাসক কাজী রকিব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সকল বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ওসমানীকে মুক্তিযুদ্বকালীন সরকার গঠনের জন্যে চাপ দেন। এরই ফলেই ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু কে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে মুক্তিযুদ্বকালীন অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়।

বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা

 বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করে ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ব শুরু হয়। তারপর ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়। ৩ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী বাংলাদেশের মাটিতে প্রবেশ করে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানী শত্রুমুক্ত হয়।

১৬ ডিসেম্বর কে বিজয় দিবস

 আর তাই আমরা ১৬ ডিসেম্বর কে বিজয় দিবস হিসাবে পালন করি। এ দিনে আমরা পাকিস্তানিদের সম্পূর্ণ পরাজিত করেছিলাম। তারা এতদিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ থেকে দখলদার বাহিনী ছিল।