Local ঢাকা ঢাকা news, বাংলাদেশ
#অভিমান
রোমানা তাসমিন
হাসপাতালের বেডে স্যালাইন চলছে অঞ্জলির।রাতে শ্বাসকষ্ট, বমি, গা গুলিয়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার মুখে খাবার বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। সকাল থেকে একটু ভালোভাবে শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে কিন্তু শরীডটা প্রচন্ড দুর্বল লাগছে।
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে স্বামী অমিত পাল। তার সুন্দর চেহারা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগগুলো ফর্সা মুখে বেশী চোখে পড়ছে।
অঞ্জলি কিছু বলার আগেই অমিত বললো,
যে মেয়ে আমাদের কথা না ভেবে চলে গেছে তার জন্য এতো কষ্ট পাওয়ার কী আছে?
আহার, জল ছেড়ে এই যে বিপদ ডেকে আনলে এর কোনো মানে হয়?
অঞ্জলির এক চোখের কোণা দিয়ে দুইফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
--তুমি কি ভাবছো আমি এখনো ওর কথা মনে করে কষ্ট পাই? একদম না, একদম না।
-- সেটাই, ঈশ্বর যা করে মঙ্গলের জন্য করে। গীতা পড়ে কী শিখলা? গীতা সারাংশ জপো মনে মনে সব ঠিক হয়ে যাবে।
--তুমি কেন এই প্রসঙ্গ তুললে বলোতো? ডাক্তার বলেছেন আমার আলসার হয়েছে। এইটা স্বাভাবিক রোগ এর সাথে মেয়ের কোনো সম্পর্ক নাই।
-- ঐ হলো, না খেয়ে থেকে আলসার করেছো।
-- বয়স হয়ে গেছে এখন কত রোগে ধরবে।
-- আর কিছুদিন পরে আমরা এই সংসারে অকেজো মানুষ হবো। আমাদের কেউ দেখবে না। কেউ নাই আমাদের।
--কোনো দিনও কি ছিলো? মেয়েটা কি সত্যিই আমাদের ছিলো?
--তোমার মনে আছে কত সখ করে ওর নাম দিয়েছিলাম অনিন্দিতা। চেহারা হয়েছিল দূর্গা প্রতিমার মতো, গায়ের রঙটা কী সুন্দর কোমল.. যখন হাঁটতে শিখলো পায়ের নূপুরে কোমরের চেইনে আমি ঘুঙুর লাগিয়ে দিয়েছিলাম। সারা বাড়িময় কী সুন্দর ছন্দ তুলে দৌড়ে বেড়াতো।
-- তখন আমাকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারতো না। আমি স্নান ঘরে যেতে পারতাম না ওকে ছেড়ে। চিৎকার করে কান্না করতো।
--আর কী সুন্দর হয়েছিল গানের গলা...
-- বাদ দাও তো। ওর কথা বলে আর কষ্ট পেও না। তুমি যাও অনেক বেলা হয়েছে নাস্তা করো না হলে তুমিও অসুখ বাঁধাবে।
--অঞ্জলি, এই যে আমরা দুইজনই দুইজন কে বোঝাই ওকে ভুলে যাওয়ার জন্য আমরা কি কেউ ওকে ভুলতে পেরেছি?
--কী করে সম্ভব বলো ও যে আমাদের কলিজার ধন...
আচ্ছা তুমি বলোতো মেয়ের জন্য শখ আহ্লাদ কার বেসী ছিলো? তুমি যেদিন মেয়েটাকে আমার কোলে এনে দিলে যেন এক ফোঁটা জলের আশায় অনেক দিনের পিপাসিত আমি উদ্দিগ্ন হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, ওকে পেয়ে আমার সকল না পাওয়া, সকল পিপাসা মিটে গেছিলো।
-- ওকে তোমায় এনে দিতে পেরে নিজের সন্তান জন্ম না দিতে পারার ইশ্বর প্রদত্ত অক্ষমতায় অপমানিত আমিও সেদিন প্রচন্ড ভাবে সুখী হয়ে হয়েছিলাম।
-- তুমি জানো ও মানুষের কাছে কী বলেছে? বলেছে উনারা আমাকে একটুও ভালোবাসে না,তাই চলে আসছি।আমি উনাদের নিজের সন্তান না।
৬ মাস পরে একই হাসপাতালে একটা ১৮ বছরের ফুটফুটে মেয়ে তিন মাসের প্রেগন্যান্সি নিয়ে ভর্তি। এই সময় গর্ভবতীদের প্রচুর বমি ভাব এবং অরুচী হয়। কিছু না খেতে পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল মেয়েটিকে স্যালাইন, ইঞ্জেকশন পুশ করার সময় নার্স সাহস বাড়ানোর জন্য নানান গল্প করতে থাকে।
নার্সের প্রশ্ন- আপনাকে তুমি করে বলি, আপনি আমার ছোট বোনের মতো।
রোগী মিষ্টি করে হেসে বললো, হ্যাঁ অবশ্যই আপু।
--তুমি খুব মিষ্টি করে হাসো, চার দিকে আলো ছড়িয়ে। তো তোমার নাম কী?
--নুর সাফা।
-- বাহ! নাম আর মানুষে ভীষণ মিল। হাতটা একটু দেখি।
বলে নার্স ক্যানুলার ভেইন খুঁজতে থাকলো...
--আপু আস্তে দিও, আমি খুব ভয় পাই। আমার এমনি তেমন কেউ নাই।
--কে আসছে তোমার সাথে, মা আসছেন?
--না,মা আসে না।
-- তুমি যে অসুস্থ মা জানে?
-- জানি না।
-- যোগাযোগ নাই?
-- না।
-- নিজে নিজে বিয়ে করেছো?
--হ্যাঁ।
--অনেকেই করে পরে ঠিক হয়ে যায়।
--আমার মা বাবা কোনো দিন ঠিক হবে না। তারা হিন্দু।
--ও।
-- জানেন, আমার জীবনে অনেক ঘটনা।
নার্সের স্যালাইন লাগানো শেষ হয়।
হ্যাঁ সাফা, বলো ঘটনা।
--আমি তাদের নিজের মেয়ে না।
--তাদের কি আরো ছেলে মেয়ে আছে?
--না নেই।
--আচ্ছা, তুমি ধর্ম বদলেছো, নাম বদলেছো, এটা তোমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু মা বাবার তো কোনো ধর্ম হয় না। তুমি একবার উনাদের সাথে দেখা করে আসিও। তোমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন কি বলে?
--উনারা দেখা করতে বলেছেন, আমি করি না। আমার বাবা ভালো বাসতো, মা সারাদিন আমাকে বকা দিতো, নিজের মা না তো তাই। আর জানেন আমার হাজব্যান্ডকে ভালোবাসি এ জন্য উনি আমাকে কত মেরেছেন?
--দেখো সাফা, তুমি টিন এজার, এই বয়সে নিজের মাকে শত্রু মনে হয় সবার। তুমি তো মা হচ্ছো মা কেন এরকম করে বুঝতে পারবে।
আমার শ্বাশুড়ি আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি ওদের কেউ না। যদি কেউ হতাম তাহলে আমাকে দেখতে আসতো।
হাসপাতালের বেডগুলোতে প্রতিদিন শত শত রোগ শোকের গল্পের সাথে অভিমানের গল্পগুলোও ধুয়ে মুছে জীবানুমুক্ত করার মেশিনে মুছে যায়।
নেটওয়ার্ক বিজি
অভিলাষ মাহমুদ
সবুজ ভবনটির দ্বিতলার সম্মুখ গ্রীলের সাথে
ঝুলে আছে লাল ভালোবাসা।
ভিতর রুমে উষ্ণ জোড়াপাহাড়ের অগ্নীতাপে
পুড়ে যায় ভবন মালিকের বুকের জমিন।
ভাড়াটিয়া কর্তা আটকে আছে
শহরে গাড়ির জ্যামে।
ভাড়াটিয়া কর্তা ফোন দেন ভবন মালিকের মুঠোফোনে।
ফোনের স্কীনে ভেসে ওঠে " নেটওয়ার্ক বিজি "।